রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন হাল ছাড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বর্তমানে অর্থের অভাবে রোহিঙ্গাদের খাদ্য খরচ মাসে ১২ ডলার থেকে কমে ১০ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য যে হাজার কোটি ডলার অস্ত্রে খরচ করেছে, তা শুধু সংঘাতকে ঘনীভূত করেছে। যুদ্ধের জন্য অস্ত্র কেনার পরিবর্তে এ অর্থ রোহিঙ্গায় খরচ করা যেত।
মঙ্গলবার ঢাকার চীন দূতাবাসে আয়োজিত ‘বসন্ত সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মাস তিনেক আগে ঢাকায় যোগ দেয়া এই রাষ্ট্রদূত।
মিয়ানমারে শিগগির প্রথম ধাপে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চীনা দূত। তবে কোনো নির্দিষ্ট দিন তারিখ তিনি জানাননি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান শেষে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। সংলাপটি সহ আয়োজক ছিল ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাড (টিবিএস)। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন টিবিএসের সম্পাদক ইনাম আহমেদ।
মধ্যস্থতাকারী চীন কেন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাজি করাতে পারছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট হওয়া উচিত ছিল না। বাংলাদেশ এ জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছে। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সমস্যা নয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে চীন সংকট সমাধানে তার ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা এ সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বৈঠক চালু করেছি। এ নিয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বসেছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু করোনার কারণে এটি নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, ২০২১ এর আগে প্রথম পর্যায়ের প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরো প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়। আর এখন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার আস্থার অভাবে। এর পাশাপাশি বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। তবে এখন সময় এসেছে সবাইকে মিলে একত্রে চেষ্টা করার, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দাতাদের। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন কমে যাওয়া চিন্তার বিষয়। পশ্চিমারা হাজারও কোটি ডলারের অস্ত্র ইউক্রেনে খরচ না করে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় খরচ করতে পারত।
চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাহায্য করতে কখনো হাল ছাড়বে না বলেও মন্তব্য করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত।
তিস্তা প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। এ প্রকল্প নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এর বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলা যাবে না।
বাংলাদেশে চীনের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তার বিরোধিতা করেন চীনা দূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, এ মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। বরং চীনের প্রকল্পগুলো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে রয়েছে। ২০১৬ সালে ২৭ প্রকল্পের বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছিল। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, এক তৃতীয়াংশ প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং এক তৃতীয়াংশ প্রকল্প আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্প ধীর গতি হওয়ার অন্যমত কারণ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ।
২০২৬ স্বল্পন্নোত দেশের কাতার থেকে বের হয়ে গেলে চীনের ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ থাক বা উন্নত দেশে পরিনত হোক চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বহাল থাকবে।