দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী তথ্যসমৃদ্ধ ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ’ নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। যেখানে থাকা তথ্যগুলো ব্যবহার করে ভোটাররা খুব সহজেই তার ভোটদান-সম্পর্কিত তথ্য ও কেন্দ্র খুঁজে পাবেন। পাশাপাশি গুগল ম্যাপে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের অবস্থান জানা যাবে। শুধু এখানেই শেষ নয়, ভোট-সম্পর্কিত ১০ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাবেন নাগরিকরা।
এই অ্যাপ ব্যবহার করে অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তি সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা রাখতে চায় বর্তমান কমিশন। মূলত অ্যাপের তথ্যগুলোর প্রবেশাধিকার তিনটি ভাগে ভাগ করেছে বর্তমান কমিশন। সবাইকে সব তথ্যের প্রবেশাধিকার দিতে চায় না তারা। এখন অ্যাপের কারিগরি ও আর্থিক দিক যাচাই করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশনারদের সামনে এই অ্যাপ নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) তুলে ধরা হয়। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনার ও ইসি সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। মূলত নির্বাচন তথ্যসমৃদ্ধ অ্যাপই ছিল সভার মূল আলোচ্যসূচি।
এতে অ্যাপের তথ্যগুলোর প্রবেশাধিকার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভোটার, রাজনৈতিক দলসহ সবার প্রবেশাধিকার রাখা হয়েছে এক অংশের তথ্যে। অপর একটি অংশে ভোটের দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার রাখা হয়েছে। আরেকটি অংশ ভোটার, প্রার্থী, এজেন্টদের জন্য।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভোটাররা কোন এলাকায় কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন, তারা এই অ্যাপটি ব্যবহার করে জানতে পারবেন। নির্বাচন শেষে রেজাল্ট (ফলাফল) জানতে পারবেন কেন্দ্রভিত্তিক ও আসনভিত্তিক। এটা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন রকমের কারিগরি আর্থিক দিক যাচাই করা হচ্ছে।’
টেকনিক্যালি এ রকম অ্যাপ করা সম্ভব উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, ‘টেকনিক্যালি করতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এটা জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে চাই। যদি সম্ভব হয়।’
ভোটার, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, কমিশনসহ সবার প্রবেশাধিকার থাকবে যেসব তথ্যে
নির্বাচনী এলাকার নাম ও নম্বর। প্রার্থীর নাম, পরিচিতি ছবি, দলীয় পরিচয় ও মার্কা হলফনামা প্রদত্ত তথ্য। ভোটকেন্দ্র-সংক্রান্ত তথ্য, কেন্দ্রের নাম, নম্বর, কক্ষ সংখ্যা, ছবি, গুগল ম্যাপে প্রদর্শন ইত্যাদি। কেন্দ্র ও ভোটকক্ষভিত্তিক ভোটারদের তথ্য (ভোটাররা যাতে অ্যাপে দেখতে পারেন তারা কোন কেন্দ্রে কোন কক্ষে ভোট দিতে হবে। কোন কোন আসনে ভোটকেন্দ্রে ইভিএম, কোন আসনে ব্যালটে ভোট হবে), কেন্দ্র ও আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা (পুরুষ ও নারী ভিন্নভাবে), ভোট চলার সময় প্রতি ঘণ্টায় কেন্দ্র ও আসনভিত্তিক প্রদত্ত ভোটের হার, নির্বাচন শেষে আসনগুলোয় কেন্দ্ৰভিত্তিক কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন তা সংখ্যায় ও চার্টের মাধ্যমে প্রদর্শন, দলভিত্তিক প্রাপ্ত আসন সংখ্যা, নিকটতম প্রার্থী পরিচিতি ও প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা।
ইসির কর্মকর্তা, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রবেশাধিকার থাকবে যেসব তথ্যে
রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তার পরিচয়, ফোন নম্বর ইত্যাদি। কেন্দ্র ও কক্ষভিত্তিক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টদের নাম ও পরিচয়। প্রতি ঘণ্টায় ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, ভোট গ্রহণে সাময়িক ও স্থায়ীভাবে বন্ধ।
এ ছাড়া অভিযোগ দাখিল প্রমাণসহ অভিযোগের তদন্ত, অভিযোগের নিষ্পত্তি ইত্যাদি তথ্যে ভোটার, প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট, রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচন কমিশনের প্রবেশাধিকার থাকবে।